Tuesday, September 14, 2021

অসহায় ছেলের জমানো টাকা ‘জিনের বাদশাহকে’ দিয়ে সর্বস্বান্ত নারী

 বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ছেলের জমানো টাকা ‘জিনের বাদশাহকে’ দিয়ে সর্বস্বান্ত নারী। 



‘আপনি ভাগ্যবতী, তবে আপনার ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অনেকের বড় ফাঁড়া (বিপদ) আছে। এই ফাঁড়া কাটাতে হলে জিনের মাধ্যমে সামান্য কিছু টাকার একটি চালান দিতে হবে। এ টাকায় জিনের মাধ্যমেই মসজিদের ইমামের জন্য একটি জায়নামাজ কেনা হবে।’

গত ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামের হবিরন বেগম (৫০) নামে এক নারীর মোবাইল ফোনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কথিত এক জিনের বাদশা।

ওই জিনের বাদশা আরও বলেন, ‘আপাতত ৭০০ টাকা লাগবে। এই টাকাগুলো না দিলে পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হবে, এমনকি মারাও যেতে পারে।’

এমন ভয়ভীতি দেখালে পরিবারের অন্য সদস্যের অজান্তে হবিরন ওই জিনের বাদশার দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরে প্রথমে ৭০০ টাকা পাঠান। এরপর তিন ধাপে আরও ৮০ হাজার টাকা পাঠান। কথিত জিনের বাদশার প্রতারণার জালে পড়ে ছেলের জমানো সব টাকা হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত তিনি।

এ ঘটনায় সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নকলা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন ওই নারী। এছাড়া সিআইডি ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেবেন বলেও জানা গেছে।

বিকেলে ভুক্তভোগী হবিরন বেগম জাগো নিউজকে জানান, ওই প্রতারক প্রতি রাতে ফোন দিয়ে হবিরনের পরিবারের খোঁজখবর নেন। তার কথামতো না চললে পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের বিপদে পড়বেন এবং মারাও যেতে পারেন বলে জানান। এ ভয়ে কাউকে না জানিয়ে ছেলের কষ্টার্জিত জমানো অর্থসহ ধারদেনা করে কথিত জিনের বাদশাহর দেওয়া বিকাশ নম্বরে চার ধাপে মোট ৮০ হাজার ৭০০ টাকা পাঠান তিনি।

ওই নারীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন জানান, বহু কষ্টে জমানো টাকা খুইয়ে মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। প্রতারকের অবস্থান খুঁজে বের করতে মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিংয়ের জন্য পুলিশের এক কর্মকর্তাকে খরচ বাবদ প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সাও দিয়েছেন। তার বিশ্বাস তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ বিভাগ প্রতারক চক্রকে খুঁজে বের করতে পারবে।

এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়া আরেক ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বানেশ্বরদী খন্দকারপাড়া এলাকার আসাদুজ্জামান বলেন, মাত্র কয়েক মাস আগে আমার স্ত্রীর কাছেও একই কায়দায় ৭৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক চক্র।

তিনি আরও বলেন, আমরা অল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও অশিক্ষিত। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকরা নারীদের গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিশেষ কায়দায় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বানেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাফিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও মানুষ এভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। আমাদের এখানে একজন নারীও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এ বিষয়ে নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। বিশেষ কায়দায় তারা সহজ সরল ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।


শেয়ার করুন

Author:

নকলা ২৪ এ আপনাকে স্বাগত। নকলা উপজেলার সর্বশেষ আপডেট পেতে নকলা ২৪ এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

0 coment rios: