Monday, November 10, 2025

মাগুরার জেলা প্রশাসক হলেন নকলার কৃতি সন্তান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ



রাইসুল ইসলাম রিফাত:

শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার জানকিপুর গ্রামের কৃতি সন্তান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সম্প্রতি মাগুরা জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সততা, দক্ষতা, মেধা ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল সমন্বয় তিনি। দীর্ঘ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও নীতিনিষ্ঠ কর্মদক্ষতার মাধ্যমে নিজেকে দেশের প্রশাসনে এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

শৈশব ও কৈশর কেটেছে নকলার মাটিতে। এখান থেকেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন তার মেধা ও নৈতিকতার ভিত্তি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন নকলায়। ২০০০ সালে পাঠাকাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি এবং ২০০২ সালে ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

এরপর তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম ২০তম স্থান অর্জন করে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (DVM) কোর্সে ভর্তি হন। ২০০৭ সালে স্নাতক  (সম্মান) ডিগ্রি এবং ২০০৯ সালে মাইক্রোবায়োলজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে জাপানের ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

জানা যায়, তিনি ২০১০ সালের পহেলা ডিসেম্বর ২৮তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে মেধাক্রম ৮২তম হয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুনামগঞ্জে যোগদান করেন। এরপর সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দ্রুতই তিনি প্রশাসনের আস্থা অর্জন করেন।

তার কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন— ইউএনও হিসেবে মাঠ প্রশাসনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে সফলভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং সর্বশেষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রতিটি পদে দায়িত্বশীলতা, মানবিকতা ও পেশাদারিত্বের অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন তিনি।

অবশেষে বাংলাদেশ সরকার তার অভিজ্ঞতা, কর্মনিষ্ঠা ও নেতৃত্বগুণের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে মাগুরা জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

পারিবারিকভাবে তিনি একটি সুশিক্ষিত ও সম্মানিত পরিবারের সদস্য। তার পিতা মৃত শাহ মো. আব্দুল আউয়াল ১৯৭২ সালে এসএসসি ও ১৯৭৪ সালে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল ছিলেন। মাতা মানছুরা বেগম ১৯৭৭ সালে ইলেক্টিভ সায়েন্স বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাস করেন। তিনি একজন গৃহিণী হলেও সন্তানদের শিক্ষায় ও নৈতিকতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের ছয় সন্তানের সবাই উচ্চশিক্ষিত ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত—

১. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ: ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে স্নাতক শেষে বর্তমানে শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া স্কুলের শিক্ষক ২. মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ: জেলা প্রশাসক, মাগুরা
৩. কৃষিবিদ উম্মুল ওয়ারা (মুন্নি):বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন শেষে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ৪. শাহজাদী উলফাত আরা মুক্তা: ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন ৫. শাহ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি (অনার্স) ফাইনাল বর্ষের শিক্ষার্থী ৬. শাহজাদী ইসমাত আরা মুনা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী।

অর্থাৎ,  ছয় ভাই-বোনই যেনো নকলাবাসীর শিক্ষানুরাগীদের অনুপ্রেরণা।

এলাকাবাসী জানান, নকলার জানকিপুর গ্রামের এই আদর্শ পরিবারের  কৃতি সন্তান মাহমুদ আজ গোটা শেরপুরের গর্ব। প্রশাসনে তার নিষ্ঠা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্ব আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তার এই অর্জন কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং নকলার মানুষের জন্যও এক গৌরবের অধ্যায়।

শেয়ার করুন

Author:

নকলা ২৪ এ আপনাকে স্বাগত। নকলা উপজেলার সর্বশেষ আপডেট পেতে নকলা ২৪ এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

0 coment rios: